বিচারাঙ্গণে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ সুপ্রিমকোর্ট বার নির্বাচনে ফলাফলে ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী তথা বিএনপি সমর্থিত প্যানেল সভাপতি-সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিপুলভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এ বিজয় দেশের বিচারাঙ্গণে সরকারি নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ। দেশের বিচার বিভাগের এই চরম সঙ্কটে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা সঠিক রায় দিয়ে বিচারালয়ে সরকারি নোংরা খেলার দ্ব্যর্থহীন প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরো বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সর্বব্যাপী তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে। সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশনেত্রীকে কারামুক্ত করা হবে। খালেদা জিয়াকে সাথে নিয়ে এবং তার নেতৃত্বেই বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলায় সরকার একের পর এক হস্তক্ষেপ করে যে নোংরা খেলা তারা খেলছে, তা দেখে গোটা জাতি শুধু বিস্মিত নয় ঘৃণায় ধিক্কার জানাচ্ছে। কয়েকদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের রক্ষণশীল সদস্য এনথিয়া ম্যাকলনটায়ার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
এতে তিনি বলেছেন, ‘ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে আমার আগ্রহ বাংলাদেশ নিয়ে, আমি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দীত্ব ও মামলার বিষয়টি অনুসরণ করছি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের ন্যায্য বিচার-প্রক্রিয়ার অধিকার থাকতে হবে। বিচার বিভাগকে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। অভিযুক্ত প্রতিটি নাগরিকেরই নিরপেক্ষ আদালতের কাছে নিজেদেরকে ডিফেন্ড করার অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
রিজভী বলেন, কিন্তু আমাদের বিচার বিভাগ সরকারি প্রভাবমুক্ত নয়। বরং বিচার বিভাগ সরকারের ইচ্ছা-পূরণেরই হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। প্রহসনের বিচারের মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
তিনি বলেন, সরকার মিথ্যা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সাজা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করার পর এখন তার জামিন বিলম্ব করতে ওকালত নামায় স্বাক্ষর নিতে পর্যন্ত বাধা প্রদান করা হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেলে বন্দী করার পর তাকে আরো চারটি মিথ্যা, সাজানো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
অনেকবার চেষ্টা করেও আইনজীবীরা ওকালতনামায় বেগম খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নিতে পারেননি কারাকর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায়। গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি মামলার ওকালতনামায় বেগম খালেদা জিয়ার সই নিতে গিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে আইনজীবীরা ফিরে এসেছেন। এ জন্য এসব মামলায় আইনি পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না।
রিজভী বলেন, আজকেও পত্রিকায় দেখলাম নরসিংদীতে চাঁদা না দেয়ায় এক নববধূকে উঠিয়ে নিয়ে তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। সামাজিক অবক্ষয়ে অন্ধকার শুধু রাতে নয় নৈরাজ্যের অমানিশা সূর্যালোকিত দিনকেও ঢেকে ফেলেছে। ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি থেকে বাঁচতে বাউফল থানার ওসি নিজের থানায় নিজে জিডি করেছেন। প্রতিদিন অপহরণ, খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, বিচারবহির্ভূত হত্যা, জবর দখল চলছে পাল্লা দিয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামা, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: শীর্ষনিউজ