ভোটকেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ সমর্থক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর পক্ষে চার যুবক প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিলেও তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো গরজ নেই। এ ছাড়া দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলি ছোড়া হলেও পুলিশ বলছে, অস্ত্রধারী কাউকে দেখেনি তারা। অস্ত্রধারীদের বিষয়ে পুলিশের নির্বিকার ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থক কাউন্সিলর পদপ্রার্থী বিবি মরিয়মের বাড়ির সামনে ও আঙিনায় তাঁর অনুসারী চার যুবক প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করেন। ওয়ার্ডের বেচাশাহ রোডে তাঁর বাড়ির সামনে প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গুলি ছোড়ার ঘটনাকেও ‘সামান্য ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ময়নুল ইসলাম। প্রথম আলোয় গতকাল শুক্রবার অস্ত্রধারীদের ছবি ছাপা হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি তাদের চিনতে পারি কি না।’
এ ঘটনায় কোনো মামলা হবে কি না, জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘কে মামলা করবে? কিসের মামলা?’
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের দিন পুলিশ অস্ত্রধারীদের দেখতে পায়নি ভালো কথা। কিন্তু গণমাধ্যমে অস্ত্রসহ ছবি আসার পর তাঁদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব পুলিশের। তিনি বলেন, অবশ্যই অস্ত্রধারীদের আইনের আওতায় আনা উচিত। সুশাসনের অভাব থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে।
তবে নির্বাচনে ভোটাররা অস্ত্রধারীদের বর্জন করেছেন। নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ১১ হাজার ৪২৫। বিবি মরিয়ম ছয় প্রার্থীর মধ্যে চতুর্থ হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৫৮ ভোট। চট্টগ্রাম নগর শ্রমিক লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ২ হাজার ৮৬৪ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তাঁর চেয়ে ৯ ভোট কম পান আওয়ামী লীগ সমর্থক আরেক প্রার্থী মোরশেদ আলী।
নবনির্বাচিত কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, অস্ত্রবাজদের প্রত্যাখ্যান করেছেন ভোটাররা। যদি বিবি মরিয়মের লোকজন সন্ত্রাস না করত, ভোটার উপস্থিতি আরও বেশি হতো।
অস্ত্রধারী ওই যুবকদের মধ্যে দুজনকে নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও বিবি মরিয়মের সঙ্গে দেখা গেছে। বিবি মরিয়ম গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির মহিলা সম্পাদিকা। এই কমিটি এখনো চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের অনুমোদন পায়নি। তিনি বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সাংসদ এম এ লতিফের অনুসারী। সাংসদের হাতে গড়া সংগঠন ‘স্বাধীনতা নারী শক্তি’র সভানেত্রী তিনি। তাঁর ছোট ভাই নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। চট্টগ্রামের ওমর গণি এম ই এস কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া। নির্বাচনের দিন মরিয়মের পক্ষে অস্ত্রবাজিতে অংশ নেওয়া যুবকদের বেশ কয়েকজন ওই কলেজের ছাত্রলীগের কর্মী।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, চার অস্ত্রধারীর মধ্যে রাকিব হায়দার এম ই এস কলেজের ছাত্র। ভোটের দিন সাদা-নীল টি শার্ট পরা রাকিবের হাতে ছিল পিস্তল। একই টি-শার্ট পরে তিনি বিবি মরিয়মের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায়ও অংশ নেন। প্রচারণার ছবি নিজের ফেসবুক আইডিতে ২৫ মার্চ দিয়েছিলেন রাকিব।
অস্ত্রধারী আরেক যুবক মাহমুদুর রশিদ ওরফে বাবু। তিনি নগর ছাত্রলীগের সদস্য। ভোটের দিন কালো শার্ট পরে ছিলেন। তিনিও বিবি মরিয়মের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। ২৬ মার্চ নিজের ফেসবুক আইডিতে বিবি মরিয়মের সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ছবি দিয়েছিলেন রশিদ।
যাঁদের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম। তিনি বলেন, পদ-পদবি না থাকলে কারও বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
নির্বাচনে অস্ত্রধারীদের ব্যবহার করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিবি মরিয়ম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাড়ির আঙিনায় প্রতিপক্ষের লোকজন এসে হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে ছেলেরা কী করেছে সেটা এলাকাবাসী দেখেছে। তাঁর দাবি, জাহাঙ্গীরের (জয়ী প্রার্থী) লোকজনের গন্ডগোলের কারণে তিনি কম ভোট পেয়েছেন।
তবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তাঁর পক্ষে কোনো অস্ত্রধারী ছিল না। হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
ভোটের দিন বিবি মরিয়মের পক্ষের যুবকেরা বেচাশাহ রোডে জাহাঙ্গীরের নির্বাচনী ক্যাম্প ও কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করেন। এ সময় জুয়েল নামে এক যুবকসহ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলে তিনটি গুলির খোসা ও একটি তাজা গুলি পড়ে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন মরিয়মের পক্ষে কাজ করা যুবকেরা। অস্ত্রের জোরে পাস করতে চেয়েছিলেন তিনি।
সূত্র: প্রথম আলো