সচিবালয়ে সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর এক মাসের জন্য সরকারি নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হলেও তা মানছেন না সাধারণ আন্দোলনকারীরা। সচিবালয়ে বৈঠকের পর যখন ব্রিফিংয়ে স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানানো হয়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় আন্দোলনকারীরা স্লোগানে মুখর। তাদের বক্তব্য, দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা কোনও মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যকে চিনি না। আমরা শুধু চিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনাকে। তিনি ঘোষণা দেবেন, তবেই আমরা মেনে নেবো।’
রাশেদ খান আরও বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার সৈনিক। জাতির পিতা আমাদের আদর্শ। আমরা পিছু হটবো না।’
এর আগে, সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কারের যৌক্তিক দাবিগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে। কোটা পদ্ধতি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ৭ মে পর্যন্ত এই পরীক্ষা নিরীক্ষা চলবে। সে পর্যন্ত স্থগিত থাকবে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলন।
সচিবালয়ে সরকারের প্রতিনিধি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে টিএসসি এলাকায় অবস্থানরত আন্দোলনকারীরা খানিকটা চুপ হয়ে ছিলেন। তবে ওই বৈঠক থেকে স্থগিতের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়েছে জানার পরপরই সরব হয়ে ওঠেন তারা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ফের স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আন্দোলন স্থগিত হয়নি বলেও প্রচার করা হয় মাইকে।
সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রতিনিধি দল ফিরে এসে সবাইকে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানালে সাধারণ আন্দোলনকারীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তারা আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন। এ সময় ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়। তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারী নেতাদের কথা কেউ শুনতে চাইছেন না।
এদিকে, আন্দোলনকারীরা শাহবাগ ও বাংলা একাডেমির দিকে বোল্ডার দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। তাদের আশঙ্কা, পুলিশ গাড়ি নিয়ে ঢুকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করতে পারে। ঢাবি চারুকলার পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির সামনে রাস্তাতেও তারা ব্যারিকেড দিয়ে রাখেন। রাস্তার কোনও কোনও স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে ছোট ছোট আগুনও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
টিএসসি এলাকার আশপাশে আন্দোলনকারীদের কারও কারও হাতে লাঠিও দেখা গেছে। বহিরাগত ছাত্রলীগের সদস্যরা হামলা চালাতে পারে— এমন আশঙ্কায় আন্দোলনকারীরা এমন প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন