বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার তিলে তিলে নি:শেষ করতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ। তিনি অসুস্থ হলেও এখন পর্যন্ত তাকে কোনো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, সরকারী মেডিকেল বোর্ড মামুলি প্রহসনের এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করে ফিজিওথেরাপীর সুপারিশ করেছে। অথচ তাকে তিলে তিলে নি:শেষ করার জন্যই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে এখন চিকিৎসার সুযোগও দেয়া হচ্ছে না। এটা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে বহুমুখী চক্রান্তের অংশ।
‘অশুভ শক্তি যেন আর ক্ষমতায় না আসতে পারে’ গতকাল পহেলা বৈশাখের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, এখন জনগণ মনে করে দেশের সবচেয়ে বড় অশুভ শক্তি বর্তমান মহাজোট সরকার। ভোটারবিহীন অগণতান্ত্রিক শক্তি হচ্ছে সবচাইতে নিকৃষ্ট অশুভ শক্তি।
রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, একজন বয়স্ক ও দেশের জনপ্রিয় নেত্রী যিনি দীর্ঘদিন ধরে হাঁটু ও চোখের সমস্যার পাশাপাশি তাকে কারাগারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখায় আরো বেশকিছু শারীরিক সমস্য দেখা দিয়েছে। তার দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং সম্প্রতি চোখের অপারেশনও হয়েছে। এমনকি সরকারী মেডিকেলের চিকিৎসক বোর্ড বলেছে তার এক্স-রে রিপোর্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে ঘাড়ে ও কোমরের হাড়ে সমস্যা আছে।
এমতাবস্থায় আধুনিক চিকিৎসার যুগে এমআরআইসহ উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া শুধু এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট ও সঠিক রোগ নির্নয় সম্ভব নয়। দেশনেত্রীকে যেদিন পিজি হাসপাতালে আনা হয়েছিল সেখানে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের ডাকা হলেও তাদেরকে চিকিৎসাসেবার সুযোগ ও পরামর্শ নেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কারাগারে তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের দেখা করতেও বাধা দেয়া হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি বেগম জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য অতি দ্রুত তার নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকারী হুকুমে কারসাজিমূলকভাবে বেগম জিয়ার জামিনকে স্থগিত করা হয়েছে, এসব ঘৃণ্য চক্রান্ত বাদ দিয়ে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিন। তার চিকিৎসা কিসে ভাল হয় সেটি তাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিন। বেগম জিয়ার ইচ্ছানুযায়ী তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করুন।
সরকারকে অশুভ আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, মানুষ দিন গুনছে এই অশুভ শক্তির পতনের। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্বৈরাচারীরা কী শুভ শক্তি? অনাগত দিনের দুশ্চিন্তা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ঘনায়মান হতাশা আর বিরোধীদের গুম, খুন, অদৃশ্য করা, হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলা, হাঁটুতে গুলি করে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করা, খুলনায় বিএনপি নেতাকে তুলে নিয়ে কক্সবাজারে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে দেয়া ইত্যাদি পরিস্থিতিতে দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী প্রাণখুলে হাসতে পর্যন্ত ভুলে গেছে।
এই পরিস্থিতি কী কোনো শুভ শক্তির লক্ষণ? জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, জনগণের সমস্ত মৌলিক ও মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে, নির্যাতন-নিপীড়ণ চালিয়ে সম্পূর্ণ বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছেন। এটা কী শুভ শক্তির পরিচয় বহন করে? এখন রাষ্ট্রক্ষমতাকে আরো দীর্ঘ মেয়াদে ভোগ করার স্বপ্নে দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করতে জেলজুলুম ও বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন-নিপীড়ণ চালিয়েও নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না।
তিনি বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে কবিগুরুর ‘১৪০০ সাল’ কবিতাটি আওড়িয়েছেন। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে এটুক্ইু বলতে চাই-বিরোধীদের প্রতি সরকার প্রধানের ক্ষোভ, ঘৃনা এবং ধ্বংস করার মানসিকতার কারণে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ওই কবিতাটি এখন কীভাবে গৃহীত হচ্ছে সেটি তিনি উপলব্ধি করতে পারেননি।
রিজভী জানান, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাককে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় যোগ দিতে বাধা দেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি পরিষদের মাসিক সভায় যোগ দিতে গেলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ তার গাড়ির গতিরোধ করে এবং গ্রেফতারের ভয় দেখায়। যদিও তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি অসত্য ও বানোয়াট মামলায় উচ্চ আদালত কর্তৃক জামিনে রয়েছেন।
এই মামলা ছাড়া তার নামে কোনো মামলা না থাকলেও তাকে গ্রেফতারের ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে পুলিশ আবু আশফাককে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় যোগ দিতে না দিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে উদ্যত হলে তিনি ফিরে যেতে বাধ্য যান। বিষয়টি নিয়ে খন্দকার আবু আশফাক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপার ঢাকাকে অবহিত করলেও তারা কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
আশফাক ঘটনাটিকে পরিকল্পিত দাবি করে বলেছেন-মূলত: স্থানীয় প্রশাসন পরিকল্পনা করে উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্তের ষড়যন্ত্র করছে। খন্দকার আবু আশফাক মামলায় জামিনে থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতারের হুমকি প্রদান এবং স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্তে ষড়যন্ত্রের ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এধরনের উদ্যোগ থেকে বিরত থাকার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
সূত্র: নয়াদিগন্ত