প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলেই বিক্ষোভ করে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি। তাদের সেই বিক্ষোভে এবার যুক্ত হয়েছে বিশাল বিলবোর্ড লাগানো ভ্যানগাড়ি। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের বিরুদ্ধে বার্তা নিয়ে লন্ডনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে এসব ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড।
বাংলাদেশের রাস্তায় যেমন মিছিল হয়, ঠিক একই রকমভাবে গতকাল মঙ্গলবার লন্ডনের কয়েক কিলোমিটার সড়ক প্রদক্ষিণ করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা। লন্ডনে ভিনদেশি রাজনৈতিক বিরোধ নিয়ে এমন মিছিল বিরল।
বিএনপির এমন আচরণ বিদেশে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে অভিযোগ করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক।
কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন লন্ডনে আছেন। তিনি স্থানীয় সময় গত সোমবার মধ্যরাতে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান। ২২ এপ্রিল তাঁর ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার কথা।
প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে আসার আগের দিন সোমবার থেকেই বিক্ষোভ শুরু করে বিএনপি। ওই দিন ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। একই সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টের আশপাশে ঘুরে বেড়ায় বিএনপির ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড। পরদিন মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের একটি অধিবেশনে অংশ নিতে ওয়েস্টমিনস্টারের দ্বিতীয় কুইন এলিজাবেথ হলে যান। বিএনপির নেতা-কর্মীরা হলের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। এরপর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের ব্ল্যাকফায়ার্সে ওভারসিস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যান। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওয়েস্টমিনস্টার থেকে মিছিলসহ সেখানে গিয়ে হাজির হন। যোগ দেয় তাঁদের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগুলোও।
সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাজ্য শাখা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টা স্লোগান দিতে দেখা যায়। আজ বুধবার কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের সভাস্থলের সামনে বিক্ষোভ করছে বিএনপি।
যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে যাবেন, সেখানেই তাঁরা বিক্ষোভ করবেন। তাঁদের ক্ষোভের কারণগুলোতে ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড নামিয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বিক্ষোভস্থলের পাশাপাশি কমনওয়েলথ সম্মেলন স্থল, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও এর আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে এসব ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড।
যুক্তরাজ্য শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের দল। তারা এটা বিদেশেও প্রমাণ করছে। তাদের আচরণ বিদেশে বাংলাদেশের মানুষের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। তারা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে—এটা অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ‘বিএনপির বিক্ষোভের বিরুদ্ধে আমরা স্লোগান দিই না। প্রধানমন্ত্রী যেখানে যান, সেখানে আমরা তাঁকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিই।’
দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রের যাঁরা ক্ষমতায়, তাদের আগে ভাবমূর্তির বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদি চাই পরিবারে আমার সন্তানেরা আমার বিরুদ্ধে কথা বলবে না, তাহলে আমাকেও ওইভাবে চলতে হবে।’ এম এ মালেক বলেন, সরকারকে বুঝতে হবে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিচ্ছে, তাতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড নিয়ে প্রচারণা বা বিক্ষোভ লন্ডনে নতুন নয়। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের যুক্তরাজ্য সফরকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে এমন প্রচারণা হয়েছে। গত জানুয়ারিতে সাড়া জাগানো হলিউড সিনেমা ‘থ্রি বিলবোর্ডস আউটসাইড এবিং, মিসৌরি’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বিলবোর্ড ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে গেছে।
সূত্র: প্রথম আলো