অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত বছরের শেষ দিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার কথিত অসুস্থতার আবেদনপত্র নিয়ে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির কাছে করা কয়েক লাইনের আবেদনে একাধিক ভুল সহ নানান অসঙ্গতি ছিল। এই আবেদনটি প্রধান বিচারপতির নিজের হাতের লেখা ছিল মর্মে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষ বলেছে এটা একটা ভুয়া আবেদন। একজন প্রধান বিচারপতির লেখা আবেদনে এত ভুল থাকতে পারে না। এই আবেদন আইনমন্ত্রণালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কোনো কর্মচারীর হাতে লেখা।
এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাসপোর্ট জমা দেয়ার আবেদন নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পথে হাটছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন মর্মে শাহরিয়ার আলম যে ডকুমেন্ট দেখিয়েছেন সেটাকে ভুয়া ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেখানো আবেদনে ১৩টি বড় ভুল রয়েছে বলেও দাবি ফখরুলের।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেখানো ডকুমেন্টটি প্রদর্শন করে ফখরুল বলেছেন, নথির শুরুতেই ডিপার্টমেন্টের নাম ভুল লেখা হয়েছে। চিঠিতে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি’। কিন্তু হবে ‘হাইকমিশন অব বাংলাদেশ’। এতে বড় করে টেলিফোন নম্বর ও ফ্যাক্স নম্বর দেওয়া আছে, যেটা ‘আনকমন’ (অস্বাভাবিক)। ব্রিটিশ চিঠির মধ্যে এগুলো থাকে না। চিঠির ওপরে চারটি পাসপোর্টের কথা বলা হলেও নিচের দিকে আবার একটি পাসপোর্টের কথা বলা হয়েছে। চিঠির শেষাংশে ‘ফেইথফুল্লি’র এফ বড় হাতের অক্ষর দিয়ে লেখা হয়েছে। ব্রিটিশরা এটা কখনোই লিখবে না। যিনি সই করেছেন, তাঁর কোনো নাম নেই। এসব বিবেচনায় চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়েছে।
এরপর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেখানো নথিতে দেখা গেছে, ‘ডিয়ার স্যারস’ শব্দটির বানানে মারাত্মক ভুল হয়েছে। যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তরের ডকুমেন্টে এমন ভুল থাকতে পারে না বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।
এরপর তারেক রহমান লন্ডনে বসবাসের জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়ে ট্রাভেল পারমিট নিয়েছেন এটা সত্য। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেন নি। আর এই আবেদনের কোথাও লেখা নেই যে তিনি নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। কিন্তু শাহরিয়ার আলম ‘সারেন্ডার’ শব্দটির অর্থ করেছেন প্রত্যাখ্যান। এখন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
তারপর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মঙ্গলবার দেয়া এক স্ট্যাটাসে বলছেন রাজনৈতিক আশ্রয় নিতেও নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হয়। কিন্তু যুক্তরাজ্য বসবাসকারী ও আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হয় না। শাহরিয়ার আলম এটা না বুঝেই বলেছেন।
এছাড়া শাহরিয়ার আলমের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন লন্ডনে বসবাসকারী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার নাজির আহমদ। মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে নিজের ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেছেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাহেবের জ্ঞানের গভীরতা, ভাবগাম্ভীর্যতা ও ব্যক্তিত্ব অনেক কম বলে মনে হয়। আমার এটা হৃদয়ঙ্গম হয়েছে গত বছর লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে মাননীয় আইনমন্ত্রীর সাথে একটা প্রোগ্রাম থেকে। ঐ প্রোগ্রামটা ছিল ড্রাফট দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনের ব্যাপারে মত বিনিময়। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, ইউকে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। ঐ সভায় ড্রাফট দ্বৈত নাগরিকত্ব আইনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী আমি কথা বলেছি তিনবারে প্রায় ১৫ মিনিট। শাহরিয়ার আলম সাহেব হঠাৎ তার বক্তৃতায় বললেন আইনের সব ড্রাফট কপি মন্ত্রনালয়ের ওয়বসাইটে দেয়া আছে যা ছিল সম্পূর্ন অসত্য। আমি পুরো হোমওয়ার্ক করে ঐ প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। যখন তাকে পয়েন্ট অব অর্ডারের মত দাঁড়িয়ে মুখোমুখি চ্যালেঞ্জ করলাম তখনও তার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। যাহোক শেষে স্বীকার করেছিলেন যে এই আইনের হয়তো ড্রাফট কপি ওয়েবসাইটে দেয়া হয় নাই, বাকীগুলো দেয়া হয়েছে! অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় মতবিনিময় বিষয়ের বাহিরে অনেক সস্তা, আবেগী ও সারবত্তাবিহীন অপ্রাসঙ্গিক কথা তিনি বলেছিলেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে যে আমার একজন আইনজীবী কলিগ (যিনি বিলেতের টকশোগুলোতে প্রায়ই আওয়ামীলীগকে প্রতিনিধিত্ব করেন) শুধু একটি গঠনমুলক প্রশ্ন করার কারনে এবং তার মুখে দাঁড়ি থাকার কারনে প্রতিমন্ত্রী সাহেব তাকে জামায়াত ভেবে পরোক্ষভাবে রীতিমত আক্রমণ করে বসলেন! তখন থেকেই প্রতিমন্ত্রী সাহেবের ব্যাপারে আমার এই ধারনা জন্মেছিল।
এদিকে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ঘনঘন ফেসবুক স্ট্যাটাস ও বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বমহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শুধু শেখ হাসিনাকে খুশী করতে না বুঝেই হৈ চৈ করছেন। তিনিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পথেই হাটছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই ভুয়া আবেদন বানিয়ে অপপ্রচার করছেন তিনি। এখন সেটা ভুয়া প্রমাণ হওয়ায় নিজেই ফেসবুক থেকে ডিলিট দিয়ে আইডি হ্যাক হওয়ার নাটক সাজাচ্ছেন।