শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফকে উদ্ধৃত করে এমন বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। গত বুধবার ঢাকায় ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে মি. হানিফ এ মন্তব্য করেছেন।
তাঁর এই বক্তব্যের পর অনলাইনে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন অনেকে।
আসছে সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সেটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সরকারের সমালোচনাকারীরা ।
মি. হানিফ বিবিসির কাছে ব্যাখ্যা করছিলেন, শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন তিনি ক্ষমতায় থাকবেন – এমন বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
মি: হানিফের ব্যাখ্যা এ রকম, “বর্তমান বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সমপর্যায়ে বা তাঁর ধারে-কাছে অন্য কোন দলের বা যে কোন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই। … এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন, আরও যদি এগিয়ে নিতে হয় শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ নেই।
“এই সার্বিক বিবেচনায় দেশের জনগণের প্রত্যাশা, জনগণ মনে করে শেখ হাসিনা যতদিন জীবিত থাকবে এবং যতদিন তাঁর কর্মক্ষমতা থাকবে ততদিন তিনি যদি দেশ পরিচালনা করেন, তাহলে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে যেতে পারবে। এ প্রত্যাশা থেকেই আমার এ বক্তব্য।”
মি. হানিফ যদিও বলেছেন, নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ শেখ হাসিনাকে আবার বেছে নেবে, কিন্তু এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ এতোটা নিশ্চিত হচ্ছে কিভাবে? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সরকার বিরোধীরা।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ধারণা মি. হানিফের এ বক্তব্য সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সংশয় তৈরি করেছে।
মি. চৌধুরী বলেন, “জনগণের ওপর যাদের আস্থা থাকবে না, গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করবে না, তারা এ ধরনের মন্তব্য করতে পারে। এটা হচ্ছে একদলীয় মন-মানসিকতার প্রতিফলন। নীল নকশার মাধ্যমে জনগণকে প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে আবারো ক্ষমতায় যাবার প্রক্রিয়া চলছে।”
আওয়ামী লীগ নেতা মি: হানিফ বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ২০১৮ সাল নয়, ২০২৪ সালেও নয়। ২০২৯ সালের পর তারা ক্ষমতায় আসার কথা ভাবতে পারে। মি. হানিফকে উদ্ধৃত করে এ বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা মনে করেন, মি. হানিফের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় উঠতেই পারে।
তিনি বলেন, “তাদের হয়তো আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি (শেখ হাসিনা) বারবার নির্বাচিত হবেন, এমন নিশ্চিত করে তো বলা যায় না। ”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে মি. হানিফের বক্তব্য নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে নানা সংশয় তৈরি হওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করেন অধ্যাপক সুলতানা।
“তাঁরা হয়তো এ রকমই আকাঙ্ক্ষা করছেন। এ রকম করেই তাঁরা আগাচ্ছেন বলে মানুষের সন্দেহ হচ্ছে,” বলেন অধ্যাপক সুলতানা।
তবে এসব ধারণা খারিজ করে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মি. হানিফ বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশের কোন কারণ নেই। নির্বাচনের বাইরে আর কোন বিকল্পের আওয়ামী লীগের চিন্তায় নেই বলে উল্লেখ করেন মি. হানিফ।
অন্যদিকে বিরোধীদল বিএনপির অভিযোগ, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো একটি সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করছে ক্ষমতাসীনরা এবং মি: হানিফের বক্তব্যে সেটির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে তাদের ধারণা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা