অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের বিতর্কিত দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তিনি ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য পরামর্শ দিলেও সরকার এটাকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দেয়া পরামর্শের ফাইল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বাসায় পড়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করছেন। আর খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গড়িমসির কারণও জানা গেছে।
সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে নেয়ার পর থেকেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে আসতে তারা খালেদা জিয়াকে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু খালেদা জিয়া তাদের এই প্রস্তাবে রাজি হননি।
পরবর্তীতে খালেদা জিয়াকে প্রস্তাব দেয়া হয় তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান তাহলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হবে। এতেও খালেদা জিয়া রাজি হননি। সরকারের কোনো প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন।
এরপরই বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় সরকার। এখানে মূলত খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়নি। তার স্বাস্থ্যের কন্ডিশনটা কি সেটা জানতেই প্রধানমন্ত্রী তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার একটি গোপন রিপোর্টও মেডিকেল বোর্ড প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছে।
সূত্রটি বলেছে, মেডিকেল বোর্ড প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবেন। সমস্যা আর বাড়বে না। আর কয়েক মাস যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তাহলে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা অবনতির দিকে যাবে। এমনকি একটি পর্যায়ে এসে দেশে চিকিৎসা সম্ভব হবে না।
প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন, একটি পর্যায়ে বেঁচে থাকার জন্য খালেদা জিয়া নিজ থেকেই বিদেশ যেতে বলবেন। আর এখনই উন্নত চিকিৎসা দিলে সেটা আর হবে না। প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচন করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার টার্গেট বাস্তবায়নের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া, শনিবার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা যে তথ্য দিয়েছেন তাতে শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়, রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও খালেদা জিয়াকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে।
খালেদা জিয়ার তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াহিদুর রহমান, অর্থপেডিক্স বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. কুদ্দুস বলেছেন, খালেদা জিয়ার এখন বেশি সমস্যা হচ্ছে ঘাড়ের হাড় ক্ষয়। এটি ক্ষয় হয়ে নার্ভটা চাপা পড়ে গেছে। ব্রেন থেকে যে নার্ভগুলো ঘাড় দিয়ে হাড়ের দিকে যায়, সেই নার্ভগুলো চাপা পড়ে গেছে। এতে তার বাম হাতের শক্তি কমে যাচ্ছে। তিনি বাম হাতে কিছুই ধরে রাখতে পারছেন না। প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। হাতের আঙুলগুলো ফুলে গেছে। এসব সমস্যার কারণে যদি ঠিকমতো চিকিৎসা না হয় তাহলে তার প্যারালাইসিসও হয়ে যেতে পারে। প্রস্রাব-পায়খানার কন্ট্রোল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তার হাত-পা অবশ হয়ে যেতে পারে।
তারা বলেছেন, তার পায়ের হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। তাকে দুইজন ধরিয়ে হাঁটা-চলা করান। তার দুই হাঁটুর অবস্থা করুণ। যদি এ অবস্থায় তাকে রেখে দেওয়া হয় তাহলে তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন। এছাড়া তারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার চোখ লাল হয়ে গেছে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। তার সুচিকিৎসা করানো না হলে চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।
রাজনীতিক বিশ্লষকরা বলছেন, ডাক্তারদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা এখন ভয়াবহ। এ অবস্থা চলতে থাকলেও বেঁচে থাকার জন্যই তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে। এটা মূলত সরকারের একটি চক্রান্ত্রের অংশ। চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে রাজি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পিতভাবেই এসব করছেন।