অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচএম ফজলে রাব্বী সুজন বাহিনীর কর্মকাণ্ডে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, ভর্তি জালিয়াতি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ পূর্বে থেকেই রয়েছে তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ তিন বছর ক্যাম্পাস রাজনীতিতে অনুপস্থিত থাকার পর সাধারণ সম্পাদক হয়ে ফের সরব হন ফজলে রাব্বী সুজন। এরপর একে একে বিতর্কিতদের শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে আসীন করতে থাকেন তিনি। নিজের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ভবনের ৯৫ কোটি টাকার টেন্ডার বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে এই নেতার বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যাকান্ড এই টেন্ডারের জেরে হয়েছে বলে দাবি দিয়াজের পরিবারের। হাটহাজারী থানায় করা ২০১৪ সালের একটি অস্ত্র মামলায় পুলিশের খাতায় সুজন এখনও পলাতক। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও মামলার কারণে চাকরিতে যোগদান করতে পারেন নি তিনি। গত দুই বছরে অন্তত ৫০টিরও বেশি ছিনিতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে সুজন বাহিনী দ্বারা। এছাড়া বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনাও রয়েছে। আর পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ আটকও হয়েছে সুজনের দুই অনুসারী।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা বিলুপ্ত কমিটির অর্থ সম্পাদক এসএম জাহেদুল আওয়ালকেও পদে আসীন করেন সুজন। ছাত্রলীগ কর্মী তাপস সরকার হত্যা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি এই জাহেদ। গোয়েন্দাদের তালিকায় জাহেদ ভর্তি জালিয়াতির মূল হোতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। আর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নেশাদ্রব সরবরাহের অভিযোগও রয়েছে সুজন বাহিনীর বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ গত ৩ মে হাটহাজারী থানার এগারো মাইল এলাকা থেকে ইয়াবাসহ আটক ছাত্রলীগ কর্মী নাছির উদ্দিন মিশু ও নাজমুল হোসেন নকীব সুজনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শিবির নেতা জাহাঙ্গীর রাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও সুজনের বদৌলতে চবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক পদটি বাগিয়ে নেয়।
এদিকে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি পদটিতে নিজ পছন্দের মানুষকে বসাতে তৎপর রয়েছেন ফজলে রাব্বি সুজন। এদের মধ্যে তালিকায় আছে বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচএম তারেকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জীবন ও অর্থ সম্পাদক এসএম জাহেদুল আওয়াল।
এইচএম তারেকুল ইসলাম ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলো না। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম জীবনকে সভাপতি করতে ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে ইতোমধ্যে। জীবন নিজেই তার এক বন্ধুকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
অন্যদিকে অর্থ সম্পাদক জাহেদুল আওয়াল তাপস হত্যা মামলার আসামি ছাড়াও ভর্তি জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত। কমিটি না হতেই সুজনের অনুসারী সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিনু জাহাঙ্গীর আলম জীবনকে সভাপতি বলে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। যা চবি ছাত্রলীগ সহ কেন্দ্রীয় নেতাদেরও বিতর্কের মুখে ফেলেছে।