কারাগারে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি অভিযোগ করেন, সর্বশেষ ৮ দিন আগে তার পরিবারের লোকজন দেখা করতে পেরেছিলেন। তারপর থেকে বারবার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতির জন্য গেলেও আজ পর্যন্ত কাউকে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়নি।
অবিলম্বে অন্তত তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানান ফখরুল।
শনিবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাকির হোসেন ভুইয়া প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কারাগারে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটছে। তার চিকিৎসার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। আমরা বারবার বলেছি তার চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, তার ইচ্ছা অনুযায়ী, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে আমরা লক্ষ করেছি তার পরিবারের সঙ্গে তাকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ ৪ মে তার পরিবারের লোকজন দেখা করতে পেরেছিলেন। তারপর থেকে বারবার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতির জন্য গেলেও তারা আজ পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি। জিজ্ঞেস করলে তারা বলে নিরাপত্তাজনিত কারণে দেখা করতে দেয়া যাবে না।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা কিছুতেই বুঝতে পারি না খালেদা জিয়া কারাগারে সরকারের নিরাপত্তার মধ্যেই আছেন। তাহলে যারা সাক্ষাৎ করতে যাবেন এর মধ্যে নিরাপত্তাজনিত কী কারণ থাকে, তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা খবর নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন আছে, তা-ও জানতে পারছি না। আমরা তার শারীরিক অবস্থার জন্য উদ্বিগ্ন।’
আমরা অবিলম্বে অন্তত তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘৩ মাস হয়ে গেছে খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। প্রথম যখন তার সঙ্গে দেখা করতে যাই তার স্বাস্থ্য তখন অত্যন্ত ভালো ছিল। আমাদের সঙ্গে অনেক উৎফুল্ল¬ হয়েই কথা বলেছেন। তিনি তখন ভিজিটর রুমে এসে কথা বলেছেন। কিন্তু গত মাস খানেক ধরে তিনি ভিজিটের রুমে আসতে পারছেন না। যে কারণে আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎও অনেকবার বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা এত অবনতির দিকে গেছে যে তিনি আসতে পারছেন না। তার শারীরিক সমস্যা এবং সুচিকিৎসা না হওয়ায় তার পরিণতি কী হতে পারে, সে সম্পর্কে আমরা জানিয়েছি। তার প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। স্মরণশক্তি হারিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও তার মারাত্মকভাবে শরীরের অবনতি ঘটতে পারে। তারপরও এখন পর্যন্ত কোন কারণে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না- এটা আমাদের বোধোদয় হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘বারবার বলা সত্ত্বেও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে একেবারেই লোকচক্ষুর অন্তরালে নির্জন কারাগারের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে ন্যূনতম সুবিধাগুলো দেয়া হচ্ছে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয় ও তার সুচিকিৎসার জন্য করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।
সূত্র: যুগান্তর