অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জালভোট, ধানের শীষের এজেন্টদেরকে মারধর করে বের করে দেয়া ও এজেন্টদেরকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা প্রদান ও ধানের শীষের ভোটারদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ভোট শুরু হওয়ার পরই ৪০টি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদেরকে বের করে দেয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ কেন্দ্রগুলোতে তারা নিজেদের মতো করে নৌকায় সিল মারে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে কেন্দ্র দখলের সংখ্যা।
তারপর কমপক্ষে ৩০টি কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদেরকে ঢুকতে দেয়নি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসব কেন্দ্রেও তারা একচেটিয়া নৌকায় সিল মেরেছে।
এছাড়া যেসব কেন্দ্রে ধানের শীষের ভোট বেশি ছিল, সেসব এলাকায় ভোটের আগের দিনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এজেন্ট ও ভোটারদের হুমকি দিয়ে এসেছে তারা যেন ভোট কেন্দ্রে না আসে। আর যদি আসে তাহলে গুম করা হবে নতুবা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হবে। এ কারণে ধানের শীষের অনেক ভোটার আজ ভোট কেন্দ্রে যায়নি।
দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ভোট ডাকাতির এসব চিত্র না দেখালেও বেশ কয়েকটা অনলাইন গণমাধ্যম ও প্রিন্ট পত্রিকার অনলাইন ভার্সন দৃশ্যগুলো তুলে ধরেছে।
ভোট ডাকাতির এই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্রই চলছে সমালোচনা। বিশিষ্টজনেরা এই নির্বাচনকে একটি প্রহসন বললেও বরাবরের মতো নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ নেতারা অবাধ ও সুষ্ঠু বলে দাবি করেছেন।
কিন্তু, লক্ষণীয় বিষয় হলো- যিনি দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশের সকল স্তরের নির্বাচনী কার্যক্রমকে পর্যবেক্ষণ করে সঠিক তথ্যটা মানুষের কাছে তুলে ধরছেন। নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে সোচ্চার ভুমিকা পালন করছেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক সেই বদিউল আলম মজুমদারও খুলনার নির্বাচন নিয়ে আজ নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সুরে কথা বলেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে চ্যানেল২৪ এর নির্বাচনী আলাপে বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এখন পর্যন্ত যা দেখছি তাতে আমি সন্তুষ্ট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুব তৎপর, নির্বাচনী কর্মকর্তারাও কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাচ্ছেন। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে নির্বাচন এখন পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে।
বদিউল আলম মজুমদার যখন টেলিভিশনের পর্দায় বসে এসব কথা বলেন, তখন খুলনায় কমপক্ষে ১০০ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নৌকায় সিল মারছিল। ধানের শীষের এজেন্টদেরকে শতাধিক কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। বিএনপির মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রশাসনকে বলেও কোনো প্রতিকার পাননি। অথচ সুজন সম্পাদক মজুমদার বললেন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে।
সবসময় অন্যায়ের যৌক্তিক সমালোচনা করায় বদিউল আলমের প্রতি মানুষের একটা সফট কর্ণার ছিলো। কিন্তু আজকের বক্তব্যে তার প্রতি মানুষ হতাশ হয়েছে। কারণ, নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে তার বক্তব্যের হুবহু মিল রয়েছে। মানুষ তার কাছ থেকে এমনটা আশা করে না।