আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের ওপর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ নির্দেশনা দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বি. চৌধুরীকে রেললাইনে ধাওয়া করার পরও তিনি খালেদা জিয়ার কাছেই আছেন। বিএনপির হাতে অপমান-অপদস্থ হওয়ার পরও তার কোনো শিক্ষা হয়নি। তাকে বিএনপি মেরে ফেলতে চেয়েছিল। তবু তিনি বিএনপির সঙ্গেই আছেন। নির্বাচন সামনে রেখে কোন দিকে দৌড়ঝাঁপ করে তা ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ড. কামাল এবং বাংলাদেশের দুটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের নাম উচ্চারণ করে তাদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেন।
সম্প্রতি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের বৈঠকে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ব্যাপক সমালোচনা করে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করেন আইনমন্ত্রী। তখনই প্রধানমন্ত্রী আরও কয়েকটি অনির্ধারিত বিষয় আলোচনায় এনে এসব ব্যাপারে নির্দেশনা দেন।
জানা গেছে, বৈঠকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। আমি নিজেই খুলনা সিটির নির্বাচন তদারকি করেছি। তা ছাড়া শেখ হেলালরা সব ভাই মিলে খুবই ভালো কাজ করেছে। তারা জোরালোভাবে নির্বাচন তদারকি করেছে। খালেকের ইমেজ ভালো ছিল বলেই জয় এসেছে।
খুলনার নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বিএনপি এত ভোট পেল কিভাবে। তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার আমলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ওই সব নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে সারাদেশে প্রচার চালাতে হবে।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, গাজীপুর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের প্রচার কৌশল নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাহাঙ্গীরের প্রচার কৌশল ঠিক নেই, সে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, খুলনার মতো গাজীপুরেও জয় পেতে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সব বিরোধ ভুলে গাজীপুরে জয় নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে আমি কোনো অজুহাত শুনতে চাই না।
ছাত্রলীগের সম্মেলনের এক সপ্তাহ পরও কমিটি না হওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদপ্রার্থী তিন শতাধিক। সবার খোঁজখবর নিতে একটু সময় লাগবেই। যাচাই-বাছাই করে কয়েক দিনের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে।
সম্প্রতি লন্ডনে বাংলাদেশি হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর হলো অথচ যুক্তরাজ্য সরকার দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিল না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের হাইকমিশন থেকেও কোনো মামলা হলো না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশে ফিরলে যেন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয় সে নির্দেশও দেন শেখ হাসিনা।
মাদক নির্মূলে র্যাব-পুলিশের চলমান অভিযান আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। মাদক ব্যবসায়ীদের উৎখাত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
সূত্র: শীর্ষনিউজ