রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও গুলিবিদ্ধ হয়ে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইউপি সদস্য কক্সবাজারের আলোচিত এমপি আব্দুর রহমান বদির বেয়াই ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আকতার কামালও আছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে তারা নিহত হন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। আর কক্সবাজারের মহেশখালীর গহীন বনে ও মেরিনড্রাইভ সড়কের পাশে ২ জন নিহত হয়েছেন দু’পক্ষের গোলাগুলিতে। এসময় উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও গুলিসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য।
ঢাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে একজন। র্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেস হাইস্কুলের পাশে অভিযান চালানো হয়। এসময় তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা। র্যাবও পাল্টা গুলি ছুঁড়ছে কামরুল নামে একজন আহত হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়ক থেকে আকতার কামাল (৪১) নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোরে মেরিনড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর ২ নাম্বার ব্রিজ এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। আকতার কামাল উখিয়া টেকনাফের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আব্দুর রহমান বদির বড় বোন শামসুন্নাহারের দেবর এবং টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য।
মেরিনড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, ভোরে দরিয়ানগর ব্রিজ এলাকায় গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ টহলে যায়। এক পর্যায়ে সেখানে সড়কের পাশে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পায়।
লাশের পাশে এক হাজার পিস ইয়াবা, ১টি এলজি ও ৪ রাউন্ড গুলি পড়ে ছিল। পরে স্থানীয়রা এসে লাশটি এমপি বদির বেয়াই আকতার কামালের বলে সনাক্ত করেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা, প্রতিপক্ষের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলাগুলিতে আকতার কামালের মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা ইয়াবা, বন্দুক ও গুলিগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ। আখতার কামাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবার গডফাদার বলেও জানান পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় কক্সবাজারের মহেশখালীর গহিন বনে গোলাগুলিতে মোস্তাক নামে অপর এক ব্যক্তি নিহত হন।
পুলিশ জানিয়েছে, মহেশখালী উপজেলায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দু’পক্ষের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোস্তাক আহমদ নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পাহাড়তলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে এক হাজার ইয়াবা এবং ৩টি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
তিনি জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ওই সময় অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি একই এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোস্তাকের বলে শনাক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।
এরআগে বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকা থেকে হাসান নামের আরো একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ জানায়, মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ওয়াপদা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এসময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে শামীম নামে একজন আহত হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এছাড়া, পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে গাইবান্ধায় একজন, নেত্রকোনার মদনপুরে দু’জন, ময়মনসিংহ একজন, শেরপুরে একজন ও কুমিল্লার বুড়িচংয়ে একজন ও সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগের রাতে দেশজুড়ে অব্যাহত মাদকবিরোধী অভিযানে ১০ জন নিহত হন। র্যাব ও পুলিশের দাবি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তাদের মৃত্যু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত ১৫ মে থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শীর্ষনিউজের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য ও শীর্ষনিউজের প্রতিবেদকদের পাওয়া তথ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে কমপক্ষে ৬৩ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বাড়ি থেকে সকালে ডেকে নিয়ে রাতে ও দোকান থেকে তুলে নেয়ার তিন দিন পর বন্দুকযুদ্ধে নিহতের অভিযোগ আছে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে।
সূত্র: শীর্ষনিউজ