অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ আগুনে নিহতদের শোক শেষ হতে না হতেই এবং ২৫ ফেব্রুয়ারির ৫৭ সেনা অফিসার হত্যার নির্মম পিলখানা ট্রাজেডির দশম বার্ষিকীতে আরেক শোকের মুখোমুখি হতে চলছিল বাংলাদেশ। যদিও এটাকে অনেকেই বলছেন সরকারের মেকিং গেম। সরকারি ভাষ্যমতে বাংলাদেশ বিমানের দুবাইগামী একটি বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল অস্ত্রধারী এক যুবক। পরিস্থিতি খারাপ দেখে পাইলট বিমানটিকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেন। এর যাত্রীরা সব বেরিয়ে আসে। ওই অস্ত্রধারী যুবক দুইজন ক্রু ও একজন পাইলটকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছিল। এসময় সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলারও ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল। সেনাবাহিনীর কমন্ডো দল অভিযান চালিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে। এতে আর কোনো বড় ধরণের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এই হলো রোববারের বিমান ছিনতাই ঘটনার সারমর্ম।
এখন ওই যুবক কি আসলেই বিমান ছিনতাই করতে চেয়েছিল? নাকি পুরো ঘটনাই সরকারের পাতানো খেলা। মানুষের মধ্যে নানা সন্দেহ সংশয় দেখা দিয়েছে। আর এই সন্দেহ দেখা দেয়ার পেছনে কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে। কারণ হল-সরকারের বিভিন্ন সংস্থার লোকদের দেয়া তথ্যের মধ্যে মারাত্মক গরমিল দেখা যাচ্ছে। সিভিল এ্যাভিয়েশন ও সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। তাদের এই গরমিলের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকগুলো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যার জবাব তারা কোথাও পাচ্ছে না।
প্রথমত: বিভিন্ন দেশে মাঝে মধ্যে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। সব ঘটনার ক্ষেত্রেই দেখা গেছে দুর্বৃত্তদের একটি গ্রুপ এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। শুধু একজন একটি পিস্তল নিয়ে বিমান ছিনতাই করেছে এমন নজির আজ পর্যন্ত কোথাও দেখা যায়নি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দেয় যে, ২৫ বছরের একটি যুবক একটি পিস্তল নিয়ে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছে বলে কারো কাছেই বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত: বর্তমানে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই কঠোর। দুই স্তরের তল্লাশির পর একজন যাত্রীকে বিমানে উঠতে হয়। আর পায়ুপথে সোনা এনেও লোকজন বাঁচতে পারছে না। মেশিনে ধরা পড়ছে। এমন অবস্থায় একজন যুবক অস্ত্র ও বোমা সদৃশ্য বস্তু নিয়ে বিমানে ঢুকলো কিভাবে? অস্ত্রধারী একজন যুবক ইমিগ্রেশনের ভেতর ঢুকার সময় কি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ঘুমিয়েছিল? নাকি উপরের কারো নির্দেশেই অস্ত্রধারী এই যুবক প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে?
তৃতীয়ত: বিমানে থাকা জাসদ নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ছিনতাইকারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দেয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিনতাইকারী কথা বলতে চান কেন? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই ছিনতাইকারীর সম্পর্ক কি? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাকে কথা বলতে দেয়া হলো না কেন?
চতুর্থত: সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান নাঈম হাসান রাত ৯ টার দিকে সাংবাদিকদের বলেছেন-প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকেই সব কিছু করা হয়েছে। ছিনতাইকারীকে পায়ে আহত অবস্থায় ধরে আনা হয়েছে। ওই সময় আইএসপিআরের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। এসময় সিভিল এভিয়েশন ও সেনাবাহিনীর বক্তব্য ছিল অভিন্ন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই জানানো হয় যে গুলিতে ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে।
সেনাবাহিনী পরে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, তারা ছিনতাইকারীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে তারা যা করার তা করেছে। মানে গুলি করে তাকে হত্যা করেছে। তারা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে ছিনতাইকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে। সেনাবাহিনীর ভাষায়-৮ মিনিটের মধ্যেই তাদের অভিযান সফল। অথচ সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এর আগে বলেছেন, পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে আটক করা হয়েছে। সুস্থ হলে পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এখানেই মূলত গণ্ডগোল।
পঞ্চমত: বিমান ছিনতাই এটা বড় ধরণের একটা ঘটনা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যেই গুলি করে হত্যা করা হলো কেন? দেখা গেছে সরকারের কথিত জঙ্গি অভিযানের সময়ও তাদেরকে আত্মসমর্পণের জন্য একদিন-দুইদিন সময় দেয়া হয়। তারপর অভিযান শুরু করে। কিন্তু এমন একজন বড় মাপের সন্ত্রাসীকে জীবিত অবস্থায় আটকের চেষ্টা না করেই গুলি করে হত্যা করা হলো কেন? তাহলে এ ঘটনার সঙ্গে কি উচ্চপর্যায়ের কেউ জড়িত আছে? যাদের নাম প্রকাশিত হলো থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে পারে। নাকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে?
ষষ্টত: সেনাবাহিনীর ভাষায়- যাত্রী, পাইলট ও ক্রুদেরকে বের করে আনার পরই তাকে গুলি করা হয়েছে। যেহেতু বিমান ছিনতাই করতে সে ব্যর্থ হয়েছে, তাই আত্মসমর্পণ না করলে যে তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে সেটাওতো সে জানতো। যে বিমান ছিনতাই করার মতো সাহস করবে আর ব্যর্থ হয়ে কোনো যাত্রীর শরীরে কোনো আঘাত করবে না সেটা কোনোভাবেই বিশ্বাস করার মতো নয়। সে কি এখানে গুলি খেয়ে মরতে এসেছিল? বিশ্লেষকরা বলছেন, সে যদি সত্যিকার অর্থে বিমান ছিনতাইকারী হতো তাহলে সে মরার আগে গুলি করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যাত্রীদেরকেও মেরে ফেলতো।
সপ্তম: সেনাবাহিনীর ভাষ্য মতে, অভিযানের সময় তাকে ফোনে ব্যস্ত রেখেছিল। সে তখন কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল? কারণ, সেনাবাহিনী বলছে, সে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। তাকে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি। নিশ্চয় তার ফোনে এসব রেকর্ড আছে। ব্যগে তার পরিচয় সম্বলিত কাগজপত্রও থাকতে পারে। সেগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে না কেন?