অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্ষমতাসীনদে জন্য আগস্ট মাস শোকের মাস। এ মাসেই আওয়ামী লীগের ওপর বড় বড় দুইটি আঘাত এসেছে। ঘটনা যে কারণেই ঘটে থাকুক না কেন ৭৫’র ১৫ আগস্টের ঘটনা আওয়ামী লীগের জন্য হৃদয় বিদারক। এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনাও মর্মান্তিক। এখন প্রশ্ন হলো-আওয়ামী লীগ কি সত্যিকার অর্থেই এই মাসটাকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে?
আওয়ামী লীগ নেতাদের পরনে মুজিব কোট, বুকে কালো ব্যাজ ধারণ ও ব্যানারে বাঙালির শোকের মাস লেখা থাকলেও বাস্তবে আওয়ামী লীগের একজন নেতাকর্মীর চেহারাতে কিংবা কর্মকাণ্ডে কতটা ফুটে ওঠে?
বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ শোকের নামে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দোয়া করার পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের নাচ, গান করে বিনোদন নিয়ে থাকে। নেতাকর্মীদের দেখলে মনে হয় আনন্দ-উৎসব আর উৎফল্ল চেহারাতেই তারা শোকের মাসটি অতিক্রম করেছে। এর সঙ্গে তৈরি করেছে রাজনৈতিক বিভেদ।
বিগত ১০ বছর সময়ের মধ্যে এমন দিন কমই খুঁজে পাওয়া যাবে যেদিন তারা কোনো অপকর্ম করেনি। প্রতিদিন রাজধানী, দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা, থানা, ইউনিয়ন কিংবা গ্রামে খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী ধর্ষণের মতো কোনো না কোনো ঘটনা তারা ঘটিয়েই যাচ্ছে।
শোকের মাসে থেমে নেই তাদের এসব অপকর্ম। গত ১৮ আগস্ট এক স্কুলছাত্রীকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে আটদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম।
এরপর গতকাল ২৯ আগস্ট পাবনায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে অন্তঃসত্ত্বা করে পালিয়ে যায় এক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা। এছাড়াও ১৫ই আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরিয়ানি বিতরণ নিয়ে ছাত্রলীগের দুই’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
আর শোকের মাসের সর্বশেষ দিনে নামের ছাত্রলীগ মৌলভীবাজারে যা করেছে সেটা এক নজিরবিহীন জঘন্য ঘটনা। এঘটনার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মানুষ মন্তব্য করছেন, ভাদ্র মাস আসলে কুত্তা যেমন পাগল হয়ে যায়, আগস্ট আসলেও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগি সংগঠননের নেতাকর্মীরা কুত্তার মতো পাগল হয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখ যায় ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে অডিটোরিয়ামের নাম ফলক মুছে ফেলছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জানা যায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমিরুল হোসেন চৌধুরী’র নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নাম ফলক ভেঙ্গে নতুন নাম দেয় “মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ অডিটোরিয়াম”। নাম ফলক ভাঙ্গার পর ছাত্রলীগ কর্মীরা আনন্দ মিছিল করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম সহ জেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
সচেতন মহল বলছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক এটা একটা প্রতিষ্ঠিত বিষয়। কিন্তু প্রতিহিংসার কারণে শেখ হাসিনা তাকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মানতে রাজি নয়। তাই, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দলীয় বিচারপতি দিয়ে কোর্টের মাধ্যমে জোরপূর্বক রায় দিয়ে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে শেখ হাসিনা। এমনকি জিয়াউর রহমানের শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এরপর থেকেই শেখ হাসিনা তার বাবাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে দেশের সকল স্থাপনা থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলতে থাকে। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। শিশু পার্কের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন স্থাপনা থেকে জিয়ার নাম তারা মুছে ফেলছে। সর্বশেষ মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকেও জিয়ার নাম মুছে ফেলছে ছাত্রলীগ।
রাজেনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের উন্নয়ন শেখ হাসিনার মূল টার্গেট নয়, তার আসল উদ্দেশ্য হলো শেখ মুজিবকে প্রতিষ্ঠিত করা। শেখ মুজিবকে মানুষ যতটা ভালোবাসতো আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে তাকে ঘৃনা করতে শুরু করেছে। শোকের মাসে তাদের এই উন্মাদনা জনগণ একদিন ফিরিয়ে দেবে।